সাবিত্রী বর্মনের পর এবার আসাজাক কান্তেশ্বর বর্মনের কথায়। ১৮৯৬ সালের ১ লা ফেব্রুয়ারি পূর্বতন রংপুর বা আজকের লালমনিরহাট জেলার আদিতমারী উপজেলার সারপুকুর ইউনিয়নের মুশর দৈলজোড় গ্রামে জন্মগ্রহন করেন। রংপুরের রাজবংশী সম্প্রদায়ের এই মেধাবী বাংলাভাষা প্রেমী মানুষটি কলকাতার সেন্টপল কলেজ থেকে এফ এল পাশ করেন। ইংরাজী মাধ্যম শিক্ষ্যা প্রতিষ্ঠানে পরাশোনা করলেও বাংলাভাষার প্রতি তার ভালবাষা ছিল প্রশ্নাতীত।নিজের শিক্ষ্যাগুরু গিরিজাশংকর রায়ের নামে নিজের গ্রামে তিনি একটি উচ্চ বিদ্যালয় সম্পূর্ন নিজ উদ্যোগে স্থাপন করেন।তার এই স্কুল স্থাপনের প্রধান উদ্দেশ্য ছিল গ্রামের মধ্যে সবার কাছে শিক্ষ্যার আলো পৌছে দেওয়া। স্কুলটির প্রতিষ্ঠা লগ্ন থেকে তিনি ১৯৫৭ সাল পর্যন্ত তিনি বিনা বেতনে প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব তিনি পালন করে গিয়েছিলেন। আর এই শিক্ষকতার সুবাদে তিনি তার স্কুলের ছাত্রদের মধ্যে ছড়িয়ে দিতেন বাংলাভাষার প্রতি ভালবাষা। তিনি তার ছাত্রদের বলতেন উর্দু নয় বাংলাভাষাই আমাদের প্রানের মাতৃভাষা। ১৯৪৮ সালে রংপুরে প্রথম বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা করার জন্য জে সভা হয়েছিল তার অন্যতম ছিলেন কান্তেশ্বর বাবু। মিলি চৌধুরী ও সাবিত্রী বর্মনের সাথে কারমাইকেল কলেজের যেসকল ছাত্রীরা রংপুরের আদালতে বিক্ষোভ দেখিয়েছিল বিচারকের কক্ষ্যে ঢুকে বাংলাভাষার জন্য তাদের অনেকেই ছিলেন কান্তেশ্বর বাবুর ছাত্রীর। কান্তেশ্বর বাবুর স্কুলের অনেক ছাত্র ছাত্রীকে তাই পরে দেখা গেছে ১৯৫২ সালের বাংলাভাষা নিয়ে আন্দোলন করতে। ১৯৫২ সালের ২১ শে ফেব্রুয়ারীতে ঢাকার রাজপথে পাক সেনার হাতে বাংলাভাষার জন্য প্রান দেওয়া শহীদদের জন্য নিজের স্কুলের ছাত্র ছাত্রীদের নিয়ে কান্তেশ্বরবাবু রংপুরে বিশাল পদযাত্রার আয়োজন করেন বাংলা ভাষার জন্য প্রান দেওয়া বরকত, সালাম, জব্বর শহীদের স্মরণ করে। এইকারনে পাক সেনার চক্ষুশূল হতে হয় তাকে। এইজন্য পাক সেনা বিভিন্ন ছুতোয় কান্তেশ্বরবাবুকে হেনস্থা করে।আর্থিকভাবে তাকে বিপর্যস্ত করার জন্য পাক সেনারা উঠে পরে লাগে। তবুও পাকসেনার ভয়ে না দমে গিয়ে তিনি চালিয়ে জান বাংলাভাষা কে রাষ্ট্রভাষা করার প্রচার।জীবনের শেষদিন পর্যন্ত তিনি তার সাধের বাংলাভাষার দাবী নিয়ে লড়াই চালাতে চালাতেই ১৯৬৭ সালের ২২ ডিসেম্বর তিনি পরলোকগমন করেন।
এরপরেই জে মানুষটির নাম বলব তিনি হলেন প্রেমহরি বর্মন। তিনি বাংলাদেশের দিনাজপুরের মানুষ। মনিষী পঞ্চানন বর্মার ভাবশিষ্য ছিলেন তিনি। ততকালীন অখন্ড বাংলার একজন গুরুত্বপূর্ন ক্যবিনেট মন্ত্রী ছিলেন তিনি। পরে ক্ষত্রিয় সমিতির তরফে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্থানের সংসদে দিনাজপুর থেকে নির্বাচিত সাংসদ হয়েছিলেন তিনি। বাংলাদেশের রাষ্ট্রভাষা বাংলা করার আন্দোলন শুরুকরেন প্রথম জে কয়জন মানুষ তাদের অন্যতম ছিলেন এই প্রেমহরি বর্মন ।পাকিস্থান সংসদে প্রেমহরি বাবুর সমর্থনে প্রথম রাষ্ট্রভাষা বাংলা করার দাবী করেন ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত। সেদিন পাকিস্থানের সংসদে দাড়িয়ে ধীরেন্দ্রনাথ দত্তর সমর্থনে বাংলাভাষার হয়ে প্রেমহরি বাবু যে বক্তব্য রাখেন তাতে একদম চুপ হয়েগেছিলেন খোদ জিন্না। এবার আর শুধুমাত্র রংপুর নয় সমগ্র বাংলাদেশেই রাষ্ট্রভাষা বাংলা করার আন্দোলন ছড়িয়ে দেন ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত ও প্রেমহরি বর্মন। সেদিনের প্রেমহরিবাবুর পাক সংসদের ভেতরে বাংলাভাষা নিয়ে লড়াই এর ছবি সবচেয়ে বেশী প্রভাব পরেছিল জারমনে তিনি হলেন সেদিনের তরুন ছাত্র বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমান।সেই কারনেই মুজিবর রহমান মুক্তিযুদ্ধের সময় বিভিন্ন পরামর্শ নেবার জন্য বারবার ছুটে জেতেন প্রেমহরি বাবুর কাছে। ১৯৫২ এর ২১ ফেব্রুয়ারি ঢাকার রাজপথে পাকসেনার গুলিতে নিহত ভাষা শহীদদের হত্যার প্রতিবাদে এই প্রেমহরি বাবু পরদিন দিনাজপুরে ক্ষত্রিয় সমিতির তরফে এক বিশাল মিছিল বেড় করেন জা দেখে চমকে গিয়েছিল জিন্নার সরকার। প্রেমহরি বাবু স্বপ্ন দেখতেন একদিন তিনি দেখবেন রাষ্ট্রভাষা বাংলার স্বাধীন এক দেশ বাংলাদেশ। এইজন্য তিনি বিভিন্নভাবে নিজেকে জড়িয়ে রেখেছিলেন বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সাথে। সেই জন্য পাকিস্থান সরকার তারওপর করতে থাকে অকথ্য অত্যাচার। তবুও দমে জাননি প্রেমহরি বাবু। সেই কারনে পাকিস্থান সরকার তার ওপর নামিয়ে আনে অত্যাচারের খড়্গহস্ত। প্রেমহরিবাবুর শেষ ইচ্ছেছিল স্বাধীন বাংলাদেশে রাষ্ট্রভাষা বাংলাকে দেখে জাবার। আর খুব অল্পদিনের জন্য হলেও বীড় প্রেমহরি বর্মন তার জীবনের শেষ ইচ্ছে কে দেখে গিয়েছিলেন।