একধারে তিনি মনিষী পঞ্চানন বর্মার শিষ্য, আবার অন্যদিকে তিনি বাংলাদেশের মুক্তিযোদ্ধা। আবার তিনি একধারে ভাওয়াইয়া শিল্পী আবার একই সাথে ভাটিয়ালি,বাউলের শিল্পী। তারমুখে একটাই কথা বাংলাকে,বাঙালী কে ভালবাষতে হলে সবার আগে ভালবাষ তে হবে বাংলার মাটির গান ভাওয়াইয়া, ভাটিয়ালি, বাউল, মুর্শিদি, জারি গান কে। জীবন শুরুকরেছিলেন একজন লোকসংগীত শিল্পী হিসাবে। পরবর্তী তে রবীন্দ্রনাথের গানে বাংলার মাটির গানের ভাবের সুন্দর ব্যাবহার দেখে হয়েজান তিনি রবীন্দ্রপ্রেমী এক মানুষ। কেবলমাত্র রবীন্দ্রসংগীত গেয়েই নয় রাজবংশী সম্প্রদায়ের এই মহান শিল্পী নিজেই রবীন্দ্রনাথ কে নিয়ে লিখেছিলেন ১১ টি গান আর সেই গানে সুর দিয়ে তিনিই গেয়েছিলেন। বাংলা শব্দ,সুর নিয়ে তিনি অবলীলায় বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় লিখেছিলেন প্রচুর সারা জাগান গান তাই তো শব্দ সৈনিক আক্ষ্যা দেওয়া হয়েছিল রাজবংশী সম্প্রদায়ের এই মহান শিল্পী কে।
মুক্তিযুদ্ধের সময় একবার তাকে পাক সেনারা আটক করেন।আটক থাকা অবস্থায় তিনি দেখেন পাক সেনারা কিভাবে বাঙালী মেয়েদের বিশেষ করে রাজবংশী সম্প্রদায়ের মেয়েদের আটকে রেখে খেয়াল খুশি মত ধর্ষন করত।এইদেখে বিপর্যস্ত হয়ে পরেন ইন্দ্রমোহন রাজবংশী। একদিন তিনি বিপর্যস্ত অবস্থাতেই পাক সেনার বন্দী শিবির থেকে পালান। কিন্তু পালিয়ে এসে বন্দী থাকা বাঙালী ও রাজবংশী মহিলাদের অবস্থার কথা ভেবে ভাবতে লাগলেন কি করে তাদের উদ্ধার করা যায়?
এইচিন্তা করতে করতে তিনি মানসিকভাবে বিপর্যস্ত হয়ে পরেন। তখন তার মা তাকে বলেন আমরা ক্ষত্রিয় মনিষী পঞ্চানন বর্মার শিষ্য তাই তোকে বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ মানে মুক্তিযুদ্ধতে নামতে হবে। মার কথাতেই গায়ক ইন্দ্রমোহন রাজবংশী নেমে পরলেন হাতে বন্দুক নিয়ে মুক্তিযুদ্ধে।
গায়ক ইন্দ্রমোহন রাজবংশীর যোদ্ধা রুপ দেখল সবাই। এরই ফাকে আরেক রাজবংশী সম্প্রদায়ের বীড় সন্তান অজিত রায় ইন্দ্রমোহন রাজবংশী কে নিয়ে আসলেন স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রে। বাংলাদেশ স্বাধীন হল।
বাংলাদেশ সরকার তার এই বীড় সন্তান কে দিয়েছে ২১ শে পদক,রবীন্দ্র পুরষ্কার। থেমে থাকেনি বাংলা লোকসংস্কৃতি নিয়ে ইন্দ্রমোহন রাজবংশীর গবেষনা। ঢাকার বাংলা একাডমির থেকে ইন্দ্রমোহন রাজবংশীর লেখা ভাওয়াইয়া সম্রাট আব্বাসউদ্দিন কে নিয়ে প্রবনদ্ধের বইটি সারা বিশ্বের কাছে হয়ে উঠেছে তুমুল জনপ্রিয় ঠিক একইভাবে রবীন্দ্রনাথ কে নিয়ে তার লেখা,সুরকরা ও গাওয়া অ্যালবাম টিও হয়েছে তুমুল জনপ্রিয়।
এখনো ছুটে চলেছে ইন্দ্রমোহন রাজবংশীর বিজয়রথ।ভাওয়াইয়া, ভাটিয়ালি, বাউল কে নিয়ে তিনি ছুটে চলেছেন জাপান,আমেরিকা, জার্মানির মত দেশে। তারহাত ধরেই বাংলার মাটির গান ভাওয়াইয়া, ভাটিয়ালি, বাউল আজ অর্জন করেছে আর্ন্তজাতিকতা। তিনি একা নন তার এই কাজে তারসাথে হাত মিলিয়েছেন তার স্ত্রী দীপ্তি রাজবংশী ও পুত্র রবীন রাজবংশী। বাংলাদেশে নিজে তিনি প্রতিষ্ঠিত করেছেন বাংলাদেশ লোকসংস্কৃতি পরিষদ। এখানে তারহাত দিয়ে উঠে আসছে আগামীর ভাওয়াইয়া, ভাটিয়ালি, বাউলের শিল্পীরা।
আজও গুটিকয়েক যে কয়জন মানুষ রাজবংশী ও সামগ্রিক বাঙালীর সংস্কৃতি বিশ্বের দরবারে তুলে ধরছেন তাদের একজন হলেন লোকসংগীত শিল্পী রাজবংশী সম্প্রদায়ের সুসন্তান এই ইন্দ্রমোহন রাজবংশী। বাংলাদেশে ইন্দ্রমোহন রাজবংশীর জনপ্রিয়তা এতটাই জে ইয়াকুব আলি মিঠু অন্তরে মম নামে ইন্দ্রমোহন রাজবংশী কে নিয়ে বানিয়েছেন একটি সুন্দর তথ্যচিত্র।
আর জাকে নিয়ে এত কর্মকান্ড সেই ইন্দ্রমোহন রাজবংশী কি কিন্তু সব ভুলে আজও সদাহাস্যময় ভাবে ভাওয়াইয়া, ভাটিয়ালি সহ রাজবংশী তথা বাংলার সংস্কৃতি ছরিয়ে দিচ্ছেন সারা পৃথিবীতে। আমরা সবাই গর্বিত রাজবংশী সম্প্রদায়ের সংস্কৃতি প্রেমী , সৈনিক ইন্দ্রমোহন রাজবংশী মহাশয়ের জন্য।