রাজার শহর কোচবিহার। তাই স্বাভাবিক ভাবে এ শহরে দেখা মেলে রাজ আমলের বিভিন্ন নিদর্শনের। তবে এই নিদর্শন গুলি ছারাও জে জিনিশটা কোচবিহারের অন্যতম বড় দেখবার জিনিশ তা হল দোতালা বাস। ভারতবর্ষের গুটি কয়েক শহরে চলে এই দোতালা বাস। পশ্চিমবঙ্গের কলকাতা ছাড়া একমাত্র কোচবিহারেই দেখা মেলে এই দোতালা বাসের। কোচবিহারের মহারাজা জগদ্বীপেন্দ্র নারায়ন ভূপবাহাদুর এর হাত ধরে ১৯৪৫ সালে শুরু হয়েছিল কোচবিহার পরিবহন এর পথচলা। পরবর্তীতে এই কোচবিহার পরিবহনের নাম বদলে হয় উত্তরবঙ্গ রাষ্ট্রীয় পরিবহন সংস্থা। আর এই উত্তরবঙ্গ রাষ্ট্রীয় পরিবহনের হাত ধরে ১৯৫৬ সালে কোচবিহারের পথে নামে এই দোতালা বাস। আর প্রথম দিন থেকেই একদম জনপ্রিয় হয়ে ওঠে এই দোতালা বাস। তবে জতটা না পরিবহনের জন্য তারচেয়েও বেশী জনপ্রিয় হয়ে উঠেছিল এই বাস দেখা কিংবা একবার চরে দেখার জন্য। প্রথমে একটিমাত্র দোতালা বাস থাকলেও ১৯৬৫ সাল নাগাদ আরও দুটি দোতালা বাস আনা হয়। এই দোতালা বাসের সবচেয়ে বড় বৈশিষ্ট্য ছিল যে বাসের ড্রাইভারের বসবার কেবিন মূল গাড়ীর থেকে আলাদা ভাবে অবস্থান করত। বিশাল বড় দুটি লোহার পাইপের মত খন্ড দিয়ে মূল গাড়ীর সাথে এই ড্রাইভারের বসার কেবিন টি যুক্ত থাকত। অন্য বাস চালাতে জা শক্তি দরকার হত তারচেয়ে বেশী শক্তি দরকার হত এই দোতালা বাস চালাতে। ফলে একটা সময় যে সব ড্রাইভাররা দোতালা বাস চালাতেন তাদের শরীরের শক্তির কথা ভেবে তাদের মূল বেতনের সাথে অতিরিক্তভাবে দুধ খাবার জন্যও একটা টাকা বরাদ্দ করত উত্তরবঙ্গ রাষ্ট্রীয় পরিবহন সংস্থা কতৃপক্ষ। একদম প্রথমে কোচবিহার থেকে পুন্ডিবাড়ী – সোনাপুর হয়ে আলিপুরদুয়ার পর্যন্ত এই দোতালা বাস চলত।পরবর্তী সময়ে কোচবিহার থেকে তুফানগঞ্জ হয়ে বক্সিরহাট রুটেও চলা শুরু হয় দোতালা বাস। যেহেতু আগে মাথাভাংগা,দিনহাটা যাবার রাস্তায় তোর্ষা নদীর ওপর রেলসেতু দিয়েই বাস চলাচল করত তাই তাই উচ্চতার জন্য রেলব্রিজের প্রবেশের সময় মাথা আটকে যাবার কারনে ইচ্ছে থাকলেও এই দুই রুটে দোতালা বাস চালান সম্ভব হয়নি।৮০দশক থেকে একটা দোতালা বাস শহরের বিবেকানন্দ ষ্ট্রীট ক্যাম্পাস থেকে প্রতিদিন সকালে উত্তরবঙ্গ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় ( পূর্বের বিধান চন্দ্র কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়) এর ছাত্র-ছাত্রীদের এবং অধ্যাপক ও শিখ্যাকর্মীদের পুন্ডিবাড়ী ক্যাম্পাসে নিয়ে যেত ও বিকেলবেলায় তাদের আবার ফিরিয়ে আনত।
আর প্রতিবছর রাসমেলার সময় স্পেশাল বাস হিসাবে এই দোতালা বাস গুলিকে স্পেশাল বাস হিসাবে সোনাপুর,বক্সিরহাট রুটে চালান হত। ফলে মেলায় বাইরে থাকা আসা দর্শনার্থীদের পরিবার –পরিজন নিয়ে মেলায় জাওয়া-আসার ক্ষেত্রে প্রথম পছন্দ হিসাবে ছিল এই দোতালা বাস। তবে সময়ের সাথে গতিময় যুগের অগ্রগতি অনেকটাই পিছিয়ে দেয় দোতালা বাসের জনপ্রিয়তা। কেননা অন্যবাসের তুলনায় নীজের ভারি ওজনের কারনে দোতালা বাসের গতি ছিল অনেকটাই কম। ফলে যাত্রীসংখ্যাও একটা সময় আগের তুলনায় কমে যায় দোতালাবাসের।
এছাড়া দোতালা বাসের পরিচর্যার খরচও অন্য বাসের তুলনায় বেশী। তাই একটা সময় তিনটার থেকে দোতালা বাস কমে দাড়ায় একটিতে। ২০০০ সালের থেকে উত্তরবঙ্গ রাষ্ট্রীয় পরিবহন সংস্থা এই দোতালা বাস কে তাদের পর্যটন প্রকল্প সবুজের হাতছানিতে পর্যটক নিয়ে ঘোড়ানোর কাজে ব্যাভহার করা শুরু হয় কারন বেশীরভাগ মানুষ বিশেষ করে ভ্রমন পিপাসুদের কাছে এই দোতালা বাসে করে বেড়ানোর রোমাঞ্চ ছিল একদমই আলাদা। এরপর সবুজের পথে হাতছানি প্রকল্পটি হটাত করে বন্ধ হয়ে যায় দোতালা বাসের চলাচল।এর কিছুদিন পর থেকে পুনরায় সবুজের পথে হাতছানি প্রকল্প চালু হলেও আর এক্ষেত্রে ব্যাবহার করা হয়নি দোতালা বাস।
বিভিন্ন কারনে তাই বন্ধ হয়ে জায় এই দোতালা বাস চলাচল। তবে আনন্দের কথা এই দোতালা বাসের ঐতিহ্যের কথা ভেবে আবার দোতালা বাস নিয়ে ভাবতে শুরু করেছে বর্তমান উত্তরবঙ্গ রাষ্ট্রীয় পরিবহন সংস্থা কতৃপক্ষ। ফলস্বরুপ একটি দোতালা বাসকে আবার সম্পূর্নরুপে সংস্কার করে যাত্রী পরিবহনের উপযোগী করে তোলা হয়েছে। আশাকরা জাচ্ছে খুব তারাতারি আবার এই হেরিটেজ শহরের বুকে চলতে দেখাযাবে কোচবিহারের আরেক হেরিটেজ এই দোতালাবাসকে।