কতটা পথ চললে তবে পথিক বলা যায়? এর উত্তর দেওয়াটা খুব মুশকিল। তবে মানবিকতায় বিশ্বাসী হলে দুরত্ব জতই থাকুক না কেন দুজন নাগরিক গায়ক বন্ধু হতে পারে। আর সেটাই করে দেখিয়েছেন নোবেলজয়ী বব ডিলান ও বাংলাদেশের গর্ব রাজবংশী সম্প্রদায় তথা বাঙালীর গর্ব অজিত রায়।
কবিতাও যেন সুরের মুর্ছনায় হৃদয়ে সারা জাগিয়ে গান হয় তা দেখিয়েছেন এই বব ডিলান আর অজিত রায়। এইদুজনেই ছিলেন পৃথিবীর দুই প্রান্তের মানুষ। আর মানুষের মুক্তির কথা বলা এই দুই নগর গায়কের মেলবন্ধন ঘটান পন্ডিত রবিশংকর। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে অসহায় উদ্বাস্তু মানুষের পাশে দারাবার জন্য অজিত বাবু স্বাধীন বাংলা বেতারের শিল্পীদের নিয়ে অর্থ তোলার কাজ করছিলেন। যা চোখে পরে পন্ডিত রবিশংকর এর।
অজিত বাবুদের সাহায্য করার জন্য এবার বিদেশের মাটিতে জলশার আয়োজন করলেন। সেই জলশায় প্রধান শিল্পী হিসাবে উপস্থিত ছিলেন বব ডিলান।শুধু জলশায় নয় এবার বব ডিলান গিটার নিয়ে আসলেন ভারতবর্ষের মাটিতে। ছুটে গেলেন বিভিন্ন উদ্বাস্তু শিবিরে অসহায় মানুষের পাশে দাড়াতে। এইভাবে যশোরের এক উদ্বাস্তু শিবিরে দেখা হল অজিত রায়ের।দুজনেই দুজন কে জড়িয়ে ধরলেন। দেখা হল পৃথিবীর দুই প্রান্তের দুই মুক্তিকামী গায়কের। কবিদের কবিতা কে সুর দিয়ে তারাদুজনেই জাগায় মানুষের চেতনা।
বব ডিলান আর অজিত রায়ের হাত ধরেই গন।সংগীত পেল এক নতুন পরিচয়। তাইতো ডিলান লিখলেন গান কঠিন বৃষ্টির পর আসে স্বাধীনতা আর অজিত বাবুও তাই দেখে লিখে ফেলনেন অন্ধকারের পরই আসে নতুন ভোরের স্বাধীনতা। যেদিন বাংলাদেশ ছেরে চলে যান ডিলান সেদিন অজিত বাবু সুনিয়েছিল ভাওয়াইয়া গান ও মোর কাজল ভ্রোমরা রে। গন সংগীত মানে যে বিশেষ এক রাজনৈতিক মতার্দশের গান না সেটা বুঝিয়েছিলেন ডিলান আর অজিত রায়। আসলে গন সংগীত মানে স্বাধীনতার গান,সাম্যের গান। আর সেই অর্থে মানুষের জীবনের স্ফতস্ফূর্তার ফলে যে লোকগানের জন্ম হয় তাও এক অর্থে একধরনের গন সংগীত বলে মনে করতেন ডিলান,অজিত বাবু দুজনেই। অজিত বাবুর হাত ধরেই ডিলান জানতে পারেন এদেশের ভাওয়াইয়া, ভাটিয়ালি, বাউল গানকে।
পরবর্তী সময়ে রাশিয়া সফরে গিয়ে অজিত বাবু দারুন একটা কথা বলেন ভাওয়াইয়ার বাউদিয়া,বাউলের বোষ্টম আর ইউরোপের ব্যালে সিংগার এরা হয়ত পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্তে থাকলেও আসলে এরা সবাই একই কথা মানুষের মুক্তির গান ঘুরে ঘুরে প্রচার করেন।আজ অজিতবাবু বেচে থাকলে খুব খুশি হতেন এইদেখে যে তার বন্ধু তারমত আরেক নাগরিক গায়ক বব ডিলান নোবেল পেয়েছেন দেখে। তবে হয়ত অনেকের কাছে আমার কথাটা পাগলের প্রলাপ বলে মনে হতে পারে তবুও বলি যে নাগরিক গায়ক রাজবংশী তথা বাঙালীর গর্ব অজিত রায় বাবু রবীন্দ্রনাথ, নজরুল, জীবনানন্দ, মাইকেল মধুসূদনের কবিতায় শুর দিয়ে সমৃদ্ধ করেছে আমাদের সংস্কৃতি। ও একইসাথে নিজেকে বিলিয়ে দিয়েছেন বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ ও বাঙালীর আত্মসন্মান ফিরিয়ে আনার ভাষা আন্দোলনে। ভাওয়াইয়া, ভাটিয়ালি, বাউল কে তিনি নিয়ে গেছেন বিশ্বের বিভিন্নপ্রান্তে। এই মহান রাজবংশী সম্প্রদায়ের মানুষ টিকে জদি মরোন্তর নোবেল পুরষ্কার দেবার কথা বলি সেটা কি খুব যুক্তিহীন হবে? আসলে অজিত বাবু আমাদের জন্য জা দিয়েছেন তার বিনিময়ে আমরা কি তারজন্য এতটুকু দাবী রাখতে পারিনা ?